বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৩ অপরাহ্ন

ঘোষনা :
  সম্পূর্ণ আইন বিষয়ক  দেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা   দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল এর  পক্ষ থেকে সবাইকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা   । 
সংবাদ শিরোনাম :
ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবে যা করণীয় জমি আপনার, দখল অন্যের! কী করবেন? রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান, আইনী নৈরাজ্য ও অতীত ইতিহাস! শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতির মিথ্যাচার বনাম সাংবিধানিক সমাধান! সহায় সম্পত্তি পুণ্যের কাজে ওয়াক্ফ গঠন ও প্রাসঙ্গিকতা! শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামেঃ লালন কি জাত সংসারে— রক্তাক্ত মাহমুদুর রহমানের কুষ্টিয়ায় আগমন বনাম দুধের মাছিদের আনাগোনা! জনপ্রশাসন, জেলা প্রশাসক ও স্যার সম্বোধন কতটা সংবিধান ও আইনসম্মত! ক্রেতা ঠকে গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে যত আইনগত প্রতিকার! আইনে জামিন চর্চা বনাম বিচারকের পদত্যাগের দাবীতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ!
বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার আইনগত অধিকার সম্পর্কে জেনে নিন

বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার আইনগত অধিকার সম্পর্কে জেনে নিন

এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক:

বাসা ভাড়া নেওয়া ও দেয়ার আগে মালিক ভাড়াটিয়ার প্রয়োজনীয় সচেতনতা অর্থাৎ বাসা ভাড়া নেওয়ার আগে দু পক্ষেরই কি কি দায়িত্ব পালন করতে হয়,  উভয় পক্ষেরই আইনগত কি কি দায়িত্ব ও অধিকার রয়েছে তা নিয়েই আজকের আলোচনা। ধরুণ সজীব চৌধুরী ঢাকায় বাসায় ভাড়া থাকেন। বাড়িভাড়া বাবদ তার কাছ থেকে বাড়ির মালিক প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা বুঝে নেন। বাড়ির মালিক তাকে সর্বক্ষণ পানি-বিদ্যুৎ সরবরাহ, লিফটের সুবিধা এবং নিরাপত্তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলেই সজীব চৌধুরী এ বাসাটি ভাড়া নিয়েছেন। কিন্তু বাসায় ওঠার কয়েক মাসের মধ্যেই দেখা গেল, লিফট অচল; অথচ মালিক তা ঠিক করছেন না। আবার পানির ট্যাঙ্ক দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় পানিতে প্রচুর পরিমাণ ময়লা আসে। ফলে খাওয়ার পানিতে প্রচন্ড দুর্গন্ধ থাকে এবং এ পানিতে গোসল করলে শরীরে খোসপাঁচড়া তৈরি হয়। সর্বক্ষণ বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা থাকলেও দেখা যায়, প্রায়ই জেনারেটর নষ্ট থাকে এবং বিদ্যুৎ প্রদান করা হয় না। সজীব চৌধুরী এখন কী করতে পারেন?

একটি বাসা পরিবর্তন করে ফেলা কম ঝক্কির নয়। আবার নতুন বাসায় গিয়ে উঠলেও যে ভালো বাড়ির মালিক পাবেন, তার নিশ্চয়তা নেই। আইনানুযায়ী বাড়ি মালিক তার বাড়িটি বসবাসের উপযোগী করে রাখতে আইনত বাধ্য। ১৯৯১ সালের বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ২১নং ধারায় বলা হয়েছে ভাড়াটিয়াকে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ সরবরাহ, পয়ঃপ্রণালী নিষ্কাশন ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করতে হবে। এমনকি প্রয়োজনবোধে লিফটের সুবিধাও দিতে হবে। বাড়ি মালিক তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ এক মাসের অধিক, জামানত গ্রহণ করতে পারবেন না। যদি করেন, তা হলে দ-বিধি ২৩ ধারা মোতাবেক তিনি দন্ডিত হবেন। আপনি মনে রাখবেন আপনার পরিশোধকৃত বাড়ি ভাড়ার রসিদ সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক বা তার প্রতিনিধি দিতে বাধ্য। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৬ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে মানসম্মত ভাড়া কার্যকরী হওয়ার তারিখ হতে দুই বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। দুই বছর পর মানসম্মত ভাড়ার পরিবর্তন করা যাবে।

বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৮নং ধারায় বলা আছে, ভাড়াটিয়া যদি নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন এবং বাড়ি ভাড়ার শর্তসমূহ মেনে চলেন তাহলে যতদিন ভাড়াটিয়া এভাবে করতে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত উক্ত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না। এমনকি ১৮(২) ধারা মতে বাড়ির মালিক পরিবর্তিত হলেও ভাড়াটিয়া যদি আইনসম্মত ভাড়া প্রদানে রাজি থাকেন তবে তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। আইনের ১২ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোনো বাড়ির মালিক তার বাড়ি ভাড়া বাবদ ভাড়াটিয়ার আসবাবপত্র ক্রয় করতে পারবেন না।

আবার অনেক সময় বাড়িওয়ালাও না জেনে শুনেই ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ভাড়া দিয়ে ফেঁসে যান, যখন তিনি দেখতে পান ওই ভাড়াটিয়া তাঁর বাড়িতে অবৈধ কিংবা বেআইনি কোন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য যে কেউ বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১-এর আওতায় রেন্ট কোর্টের আশ্রয় নিতে পারেন।

বাড়ী মালিক যদি কোন কারণে কিংবা ভাড়াটিয়ার সাথে সম্পর্কের অবনতির কারণে ভাড়া টাকা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন, তাহলে ভাড়াটিয়া ডাকযোগে মানি অর্ডার করে ভাড়ার টাকা পাঠানোর পর বাড়ী মালিক যদি তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন তখন ডাক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ফেরত পাওয়ার ১৫দিন এর মধ্যে ভাড়াটিয়া উক্ত টাকা ভাড়া নিয়ন্ত্রক (আদালত) এর নিকট জমা দিতে পারবে। এই শর্ত পূরণ হলে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না। তবে এ শর্ত পূরণ না হলে ভাড়াটিয়া খেলাপকারী বলে গণ্য হবে এবং উচ্ছেদ হতে রক্ষা পাবে না।

মনে রাখবেন ভাড়াটিয়া ভাড়া নেয়ার সময় যে অবস্থায় ছিল, সেরূপ ভালো অবস্থায় রাখবে এবং মেয়াদ শেষে পূর্বাবস্থায় ফেরত দিবে। ভাড়াটিয়া কর্র্তৃক ভাড়া ঘরের কোনো ক্ষতি হলে বাড়িওয়ালা তাকে সে সম্পর্কে নোটিশ দেবেন। ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালার লিখিত সম্মতি ছাড়া বাড়ির কোনও অংশ উপ-ভাড়া দিলে কিংবা ভাড়াটিয়া যদি এমন আচরণ করে যার দরুণ পার্শ্ববর্তী বাড়ির দখলকারীদের কাছে উৎপাত বা বিব্রতকর মনে হয় এবং ভাড়াটিয়া চুক্তিপত্রে উল্লেখ না থাকা সত্বেও বাড়ির কোনও অংশ অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন বা করতে অনুমতি দেন তাহলে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে। বাসাবাড়ি, দোকানঘর, অফিস, গুদাম ইত্যাদি যদি মাসিক ভাড়ায় ব্যবহার করা হয়, সে ক্ষেত্রে ১৫ দিনের নোটিশে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যায়।

চুক্তি যদি বার্ষিক ইজারা হয় বা শিল্পকারখানা হয়, তবে ছয় মাসের নোটিশে উচ্ছেদ করা যায়। চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হলেও বাড়িওয়ালা যদি ভাড়া দিয়ে থাকেন, তাহলে ধরে নেয়া হবে যে, বাড়িওয়ালা চুক্তিপত্রটি নবায়ন করেছেন। ভাড়াটিয়া নিয়মিত বাড়ী ভাড়া পরিশোধ করা অবস্থায় যদি বাড়িওয়ালা তাঁকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেন, তাহলে আইনের আশ্রয় নেয়ার অধিকার ভাড়াটিয়ার রয়েছে। সাধারণত বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ ও ক্ষতিপূরণের মামলা করে থাকেন। অপরদিকে ভাড়াটিয়া বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে ঘরভাড়া ফেরত, নিষেধাজ্ঞা, অগ্রিম টাকা ফেরত পাওয়া, নিষেধাজ্ঞাসহ ভাড়া ধার্যের মোকদ্দমা করে প্রতিকার পেতে পারেন।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও সম্পাদক-প্রকাশক ‘দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল’। Email:seraj.pramanik@gmail.com, মোবাইল: ০১৭১৬-৮৫৬৭২৮

এই সংবাদ টি সবার সাথে শেয়ার করুন




দৈনিক ইন্টারন্যাশনাল.কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।  © All rights reserved © 2018 dainikinternational.com
Design & Developed BY Anamul Rasel